মোঃ ফারুক হোসেন, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ  নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথরাপুর ইউনিয়নে ২০২৩-২৪ইং অর্থ বছরে ভালনারেবল উইমেন বেনেফিট (ভিডব্লিউবি) কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত ভিজিডি কার্ড বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভিজিড্থির কার্ড ভাগাভাগিতে প্রকৃত অসহায় দরিদ্ররা পাচ্ছেন না কার্ড। ভিজিড্থির কার্ড ভাগাভাগির বিষয়টি কারো অজানা নয়। কার্ড ভাগাভাগির ফলে প্রকৃত উপকার ভোগীরা কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কয়েকবার যাচাই-বাছাই শেষে কার্ড ভাগাভাগিতে বাদ পড়েন ওই ইউনিয়নের কদমগাছী গ্রামের লতা বানু। চাল নিতে এসে নাম বাদ পড়ার বিষয়টি জানতে পারেন লতা বানু। চাল না পাওয়ায় কেঁদে খালি হাতে বাড়ী ফিরেন গৃহবধূলতা বানু।

সদ্য প্রকাশিত অত্র ইউনিয়নের ২২৫ টি ভিজিড্থির চূড়ান্ত তালিকা তৈরীতে একাধিক নামের তালিকায় অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকা করে টাকার বিনিময়ে তালিকায় নাম যোজন করেন। এতে বাদ পডে়ছেন প্রকৃত দুস্থ, অসহায় ও পঙ্গুরা। ভিজিডি কার্ডের বিনিময়ে একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে ২/৩ হাজার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনলাইনে আবেদন করেও তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের নামে তালিকা তৈরী করে গরীব ও প্রকৃত দুস্থদের বঞ্চিত করে বিত্তবান লোকজনেরা তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন।

জানা যায়, ভিজিডি কার্ডের নির্দেশনামূলক বিধিমালায় বলা হয়েছে তালিকায় ১ম অগ্রাধিকার পাবেন স্বামীহারা দুস্থ নারী, ২য় পরিবারের প্রধান নারী, যার অন্য কোনও আয়ের উ স নেই, ৩য় ১৫ শতকের কম জমির মালিক, ৪র্থ বসত বাড়ির অবস্থান খারাপ বা দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে এমন পরিবার। উল্লেখ্য, কোন অবস্থাতেই স্বচ্ছল পাকা বাড়ির মালিকের স্ত্রীর নাম অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না।

সরকারি ওই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চূড়ান্ত তালিকায় স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। ভিজিডি উপকার ভোগী নাম নিবন্ধন করতে হলে উপকারভোগী নারীকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এতেই শেষ নয়। আবেদন করার পর মেম্বার, মহিলা মেম্বার, চেয়ারম্যানের সুপারিশ লাগবে। নয়তো হবে না। উপকার ভোগীরা নিজ নিজ ওয়ার্ডের মেম্বারদের কাছে গিয়েও অনেকে ফেরত এসেছেন।

সরেজমিনে বদলগাছীর মথরাপুর ইউপিতে গিয়ে দেখা যায়, রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ভিজিড্থির চাল বিতরণ করার সময় অনেকের নাম নেই। আবার অনেকের কার্ড ইস্যূকরা হচ্ছে। চাল বিতরণের সময় চেয়ারম্যান মাসুদ রানা ও ঐ ইউপির দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা লু ফর রহমান অনুপস্থিত ছিলেন। সবার সন্মতিক্রমে চাল বিতরণ শুরুহয়।

পরবর্তীতে আসেন উপজেলা মহিলা ও শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ। চাল বিতরণের সময় মেম্বারদের ভাগ কম হওয়ায় বাধে গোন্ডগল। বদলগাছী উপজেলার প্রতিটি ইউপিতেই ভিজিডি কার্ডে ভাগ বাটোয়ারা চলে। উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান, এমপি‘র ভাগ, দলীয় ভাগ দিতেই প্রকৃত অসহায় দুস্থরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভিজিডি কার্যক্রম থেকে। কার্ড নিয়ে আর্থিক লেনদেনের কারণে প্রকৃত উপকারভোগীরা ভিজিড্থির কার্ড পান না।

মথরাপুর ইউপিতে ভিজিডির চাল নিতে আসা কদমগাছী গ্রামের হত দরিদ্র লতা বানুবলেন, আমার ঘরে চাল নেই। আমি ভিজিডি চালের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। এই নাম গুলো কয়েক বার যাচাই-বাছাই হয়। এতেই কাটা পড়ে তার নাম।

ঐ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার জান্নাতুন ফেরদৌস বলেন, ভিজিড্থির উপকারভোগীর জন্য সরকার অনলাইনে নিবন্ধন করতে বলে।

লতা অনলাইনে আবেদন করার পর আমাকে জানায়। আমি সেই নামটির জন্য চেয়ারম্যানকে সুপারিশ করি। ইউনিয়ন পরিষদ হতে প্রতিটি মেম্বারের জন্য ৬টি করে নাম দেওয়ার কথা। এই ৬টি নামের মধ্যে লতার নাম দিয়েছি। কিন্তু ভিজিডি চাল বিতরণের তালিকা থেকে লতার নাম এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, আমি আমার ওয়ার্ডের জন্য ৬টি ভিজিডি কার্ড ভাগ পেয়েছি। প্রতিটি ইউপি সদস্য ৬টি করে পেয়েছে। ইউপির গ্রাম পুলিশরা ১টি করে আর চেয়ারম্যান পেয়েছে ২৮টি করে কার্ড।

এ ব্যাপারে মথুরাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ভিজিডির চাল বিতরণের দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। আর কার্ড ভাগাভাগির বিষয়টি সঠিক নয়। আর যাদের নামে কার্ড আছে তারা না এসে তার স্বামী বা ছেলে আসলে তাদেরকে দেওয়া হয়নি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপজেলা মহিলা ও শিশুবিষয়ক অফিসার ফারুক আহমেদ বলেন, ডিসেম্বর মাসে যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরী করা হয়েছে। আর আমি জানুয়ারি মাসে যোগদান করেছি। তালিকার ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না। ২২৫ জনের মধ্যে ১১ জনের নাম তালিকাভূক্ত না হওয়ায় ১১ বস্তা চাল ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত রয়েছে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাঃ আলপনা ইয়াসমিন বলেন, কোনও ধনীলোক কার্ড পেয়ে থাকলে নামগুলো আমাকে জানালে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে সংশোধন করা হবে।